
১৮ জানুয়ারি ২০২১।। ১২.৩০
নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচন কমিশন সরকারের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের ফাড়া কাটবে না।
সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, গত শনিবার দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভায় আগের মতোই ব্যাপক সহিংসতা, রক্তপাত ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন করেছে ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন নিয়ে অন্ধকার শ্বাসরোধী পরিবেশের কোনো পরিবর্তনই হয়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অধিকাংশ পৌর নির্বাচনী এলাকায় তা-বলীলা চালিয়েছে।
সিরাজগঞ্জের শহীদগঞ্জে জনগণের ভোটে বিজয়ী আমাদের কাউন্সিলর প্রার্থী তরিকুল ইসলামকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে আওয়ামী জঙ্গী সন্ত্রাসীরা। তরিকুলের হত্যাকারী প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থী শাহাদাত হোসেন বুদ্দিন বাহিনীকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। এই হত্যাকন্ডের বিচার দাবীতে সিরাজগঞ্জ যখন উত্তাল তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সরাসরি খুনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, ’কাউন্সিলর হত্যা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র!
নিহত নির্বাচিত কাউন্সিলর যেহেতু বিএনপির নেতা, তাই তার কাছে হয়ে গেলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা! শুধু অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা কতটা নৃশংস হতে পারে এটা তার জাজ্জল্য প্রমাণ। এদের মনে কোন অনুশোচণা নেই। যতদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের ফাঁড়া কাটবে না।
তিনি বলেন, সর্বত্র চর দখলের মতো কেন্দ্র দখল করে ভোট কারসাজির ডিজিটাল মেশিন ইভিএম দিয়ে প্রকাশ্যে কারচুপি করা হয়েছে। বহু কেন্দ্রে ইভিএমে নৌকা ছাড়া কোন প্রতীক রাখেনি। মানুষ ভোট দিতে গিয়ে দেখে যে, শুধু নৌকায় ভোট পড়ছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা, কৃত্রিম লাইন তৈরী করে ভোটাদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে না দেয়া, নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্ট ও প্রার্থীদের গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া, ভোটের ফলাফল সরকারদলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ঘোষণা করা, আমাদের নেতাকর্মীদের হয় কারাগারে নয়তো এলাকাছাড়া করা, এসবই হয়েছে এই পৌর নির্বাচনে। অনিয়ম, ভোট জালিয়াতি ও পেশী শক্তির বিষয়ে অভিযোগ করা হলেও রিটার্নিং কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
রিজভী বলেন, ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে প্রচুর ভোটার উপস্থিতি ছিল। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।’ কতবড় বেহায়া এবং সরকারের কাছে আত্মা বিক্রি করলে এমন নগদ মিথ্যা বলা যায়! নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অথচ সিইসি নুরুল হুদার নেতৃত্বে যে কমিশন সেই কমিশনের অধীনে আজ পর্যন্ত একটি নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি।
তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধবংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। বরাবরের মতোই শনিবারের পৌরসভার নির্বাচনগুলোতেও সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত নির্লজ্জ। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও নিজেদের স্বাধীন স্বত্তা বিকিয়ে দিয়ে সরকারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
আওয়ামী আদর্শে রঞ্জিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা নিজের মানসম্মানকে মোটেই তোয়াক্কা করেন না। তাই সবকিছু ধ্বংস করে শুধু শেখ হাসিনার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য নৌকাকে বিজয়ী করাকে তিনি তার আদর্শিক কাজ বলে মনে করেন। ভোট কেন্দ্রের অবস্থা কী তা আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা মুখ খুলতে শুরু করেছে। সত্যিকার ভোট হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দরজা ঠুয়াই পাইবো না, দরজা খুঁজে পাবে না-এটা তো আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মুখ থেকে আসছে। আর এটাই হলো বাস্তবতা। একারণে সুষ্ঠু ভোট শেখ হাসিনার কাছে আতঙ্ক।
রিজভী আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকায় বসুরহাট পৌরসভায় তার আপন ছোট ভাই বহুলালোচিত আব্দুল কাদের মির্জার বিজয়ে অতি আনন্দিত হয়েছেন। খুশিতে গদগদ হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, বসুরহাটে যে নির্বাচন হয়েছে সেটা নাকি স্বচ্ছতার মডেল’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি ‘বসুর হাট’ মডেল নির্বাচন চান।’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার বেহুদা নির্বাচনে নিজের ছোটভাই আব্দুল কাদের মির্জার জয় লাভের আনন্দে ছোট ভাইয়ের মতোই ওবায়দুল কাদেরের এই মন্তব্যে একটি প্রবাদের কথা মনে পড়ে গেলো, ’পাগলের সুখ মনে মনে, পাতা টোকায় আর টেকা গোনে’
‘রকিবুল হুদা কিংবা নুরুল হুদা’ চক্র গত এক দশক ধরেই বেহুদা নির্বাচনের মাধ্যমে যে নানারকম নির্বাচনী মডেল জন্ম দিয়েছেন তা জনগণের স্মৃতি থেকে এখনও বাসী হয়ে যায়নি। কখনো ‘নির্বাচন ছাড়াই ১৫৪ এমপি’ আবার কখনো ‘ভোট ছাড়াই নিশিরাতের এমপি’ এইসব মডেলের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চাহিদা পূরণে এবার বেহুদা কমিশনের লেটেস্ট আবিষ্কার ‘বসুরহাট মডেল’।
তিনি বলেন, বসুরহাট পৌর নির্বাচন আওয়ামী ভন্ডামীর নতুন মডেল। ওবায়দুল কাদের এবং নিশরাতের প্রধানমন্ত্রীর ‘বসুরহাট মডেল’ এর মর্মার্থ হলো ‘সবই আমরা আমরা’। এই মডেলে তারা নিজেরাই নিজেদের প্রশংসায় ভাসিয়ে দেবে আবার নিজেরাই নিজেদের বিরোধিতায় মেতে উঠবে। এমন বিরোধিতা যাতে একদিকে গণমাধমকে ব্যস্ত রাখা যায় আবার অপরদিকে নির্বাচন নামের প্রহসনকে আলোচনায় রাখা যায়। এটাই হলো ‘বসুর হাট’ মডেল। এই মডেলে, সব প্রশংসা নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর জন্য আর সমালোচনা সব আওয়ামী লীগের অন্য সব নেতাদের। আওয়ামী লীগের সকল কাজই প্রকৃতপক্ষে এক ছলনা ছাড়া কিছুই নয়।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ জানে, আওয়ামী লীগের আমলে জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে জনগণের ভোটে হারজিত নির্ধারিত হয় না। হারজিত নির্ধারিত হয় গণভবনে। নির্বাচন কমিশন স্রেফ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পোস্ট বক্স। নির্বাচন কমিশনের কাজ, আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড থেকে পাঠানো তালিকা প্রকাশ করা। এ খেলার মাস্টার মাইন্ড শেখ হাসিনা আর খেলোয়াড় হিসাবে আছে পুলিশ প্রশাসন। নির্লজ্জ রেফারি নির্বাচন কমিশন এখানে হাতের পুতুল।
তাই আমরা মনে করি, পূর্ব নির্ধারিত এইসব একতরফা নির্বাচনকে একটু রমরমা করতেই এবারের ‘মডেল’ ছিলেন আব্দুল কাদের মির্জা। আওয়ামী লীগের এই নাটক মানুষ আগেই টের পেয়েছিলো। আমিও এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করেই বলেছিলাম, ওবায়দুল কাদেরের ভাই আব্দুল কাদের মির্জার উদ্দেশ্য যাই থাকুক, তার মুখ থেকে কিছু অপ্রিয় সত্য বেরিয়ে এসেছে। সেইসব প্রশ্নের জবাব জনগণ জানতে চায়। ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মির্জা কাদের স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘তার ভাবি অর্থাৎ ওবায়দুল কাদেরকে বৌ’ সামলাতে হবে, অন্যথায় আওয়ামী লীগকে পস্তাতে হবে’, ‘ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে যারা চলেন, তারা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী’, মির্জা কাদের আরো বলেছিলেন, তিনি এর আগেরবার জনগণের ভোটে ‘বসুরহাটে’র মেয়র নির্বাচিত হননি, তাকে জেতানোর জন্য নির্বাচনের আগের রাতেই তার ভোটের বাক্সে ভোট ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল’। তাহলে এবারেও কি কাদের মির্জাকে জেতানোর জন্য নির্বাচনের আগের রাতে নাকি সকালে ভোটের বাক্সে ব্যালট পেপার ঢোকানো হয়েছে ?
রিজভী বলেন, করোনা ভাইরাসের এই সংকটকালে প্রতিটি দেশের সরকার প্রধান সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশে নিশিরাতের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা করোনার ভয়ে নিজেকে গণভবনে বন্দি রেখে জনগণের সঙ্গে তামাশায় লিপ্ত রয়েছেন। কখনো নন ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে জনগণকে ব্যস্ত রাখা কিংবা কখনো আব্দুল কাদের মির্জার মতো ‘আইটেম বয়’ মার্কেটে ছেড়ে গণমাধ্যমকে ব্যস্ত রাখা-এইসব অপকৌশলের ব্যাপারে জনগণ সচেতন। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, মানুষকে নিয়ে, মানুষের স্বার্থ নিয়ে এইসব রঙ্গ তামাশার জবাব মানুষ কড়ায়-গন্ডায় ফিরিয়ে দেবে।
তিনি বলেন, আগামীকাল ১৯ জানুয়ারী ২০২১ মহান স্বাধীনতার ঘোষক, সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৮৫তম জন্মবার্ষিকী। এই দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ইতোমধ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
ফেসবুক পেজ লাইক করুন: https://www.facebook.com/Polnewsbd/
আমাদের টুইটার প্রোফাইল ফলো করুন: https://twitter.com/BdPolitical